আত্মার প্রতিশোধ

আত্মার প্রতিশোধ 
-রাখী চক্রবর্তী

বাইরে বেশ সুন্দর হাওয়া দিচ্ছে। বসন্ত কাল। তাই আবহাওয়া ও বাদলবাবুর মন দু’টোই ফুরফুরে। আজ কাজে যাবে না ঠিক করেছে বাদলবাবু। বাদলবাবু স্ত্রী অর্চনা ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে পৈতিক ভিটে ছেড়ে বছর তিন হল এই বাংলোতে বাস করছে। হৈ হট্টগোল নেই বেশ শান্ত পরিবেশ। এতটাই শান্ত যে দিনে দুপুরে খুন ডাকাতি হলে কেউ কিচ্ছুটি জানতে পারবে না।বাদলবাবু মর্গে কাজ করে। তা বাড়ি ফিরতে তার বেশ রাত্রি হয়। ছেলেমেয়ে দুটো বেশ ডাকাবুকো। অত সাহস বাবা ভালো না। অর্চনা দেবী কিন্তু ভিতু মহিলা। গত পরশু দিনের ঘটনাটা বলছি। কি হয়েছিল সেদিন ,,,,,,,

কাজে যাবে না বলে বাদলবাবু ছেলেমেয়েকে জানিয়ে দিল। ওরা খুব খুশি। বাড়িতেই ওরা চারজন হৈ হুলোর করবে। ভাল ভাল খাবার খাবে কিন্তু রাত আটটার সময় মর্গের থেকে ফোন এল, যে করেই হোক বাদলবাবুকে রাতে ডিউটিতে যেতেই হবে। কি আর করা যাবে,,,, কাজ তো। অর্চনা দেবী ছেলেমেয়েকে নিয়ে খেয়ে শুয়ে পড়ল। ঠিক রাত দুটোর সময় কলিং বেল বাজছে টিরং টিরং অর্চনা দেবী ভাবছে বাদলবাবুর তো নাইট ডিউটি তাহলে এখন কে বেল বাজাচ্ছে? লেন্স দিয়ে দেখে অর্চনা দেবী দরজা খুলে বাদলবাবুকে বলল,”শরীর ঠিক আছে তোমার এত তাড়াতাড়ি চলে এলে?” বাদলবাবু হুম বলে নিজের ঘরে চলে গেল। বাদলবাবুর ছেলেমেয়ে কিছুই টের পেল না। রাত তিনটের সময় বাদলবাবুর ছেলে রন বাথরুমে যাবার সময় দেখল মেন গেটের পাশে বিশাল একটা ছায়া মূর্তি। কে,,, কে,,, ওখানে বলতেই ছায়া মূর্তিটা উধাও। যাইহোক বাথরুমে ঢুকেই রন চমকে গেল ওর বাবাকে দেখে। ওর বাবার সারা শরীরে ধারালো অস্ত্রের দাগ। কিন্তু কোন রক্ত নেই। রন ওর বাবার এই দৃশ্য দেখে চিৎকার করতেই ওর বাবা দু’হাত বাড়িয়ে রনের গলাটা টিপে ধরেছে।রনের চিৎকার শুনে পিয়ালি রনের বোন ঘরের বাইরে এসে এদিক ওদিক দেখছে কিন্তু কাউকে দেখতে পারছে না। গোঁ গোঁ আওয়াজটা মনে হয় বাথরুম থেকে আসছে। পিয়ালি বাথরুমের সামনেই দেখল রন পড়ে আছে মুখ দিয়ে গেজলা বের হচ্ছে। মা, মা, করে ডাকতেই ওই ছায়া মূর্তিটা পিয়ালির গলাটা টিপে মাটিতে ফেলে দিল। অর্চনা দেবী এসবের কিছুই জানতে পারলো না। অর্চনা দেবী বিছানায় শুয়ে আছে বাদলবাবুর মুখে কোন কথা নেই ।পাশ ফিরে শুয়ে আছেন উনি।

কি গো,,, তুমি কোন কথা বলছো না। কি হয়েছে, ,,?অর্চনা দেবী কথাগুলো বলার সাথে সাথেই পাশ ফিরল বাদলবাবু ।ওমা,,,,আপনি কে? আপনি এখানে কি করে এলেন? বিকৃত মুখ দেখে চেনার উপায় নেই উনি কে।সারা শরীর ক্ষত বিক্ষত। চোখ দুটো ঠিকরে আসছে ।অর্চনা দেবী ভয়ে কাঁপছে ।রন,,, পিয়ালি,,, তোরা কোথায়, ,,,,
কি বিকট হাসি হেসে ভয়ঙ্কর লোকটা বলছে,”সব শেষ করে দিয়েছি শুধু তুই বাকি।” কে কে আপনি?

এর মধ্যেই ভুলে গেলি আমাকে। মনে কর একবছর আগের ঘটনা।
অর্চনা দেবী কাকুতি মিনতি করছে, আমাদের ভুল হয়ে গেছে। ছেড়ে দাও। এই বাড়িটা আমি কালকেই ছেড়ে দেব। রতনদা তোমার বাড়িটা লোভে পড়ে আমরা নিয়েছি। কিন্তু ও তোমাকে মারতে চাইনি। গলাটা এতো জোরে টিপেছে ও তোমার। ও নিজেই বুঝতে পারেনি।রতনের আত্মা ছায়া মূর্তি ধারণ করে বলল, “বাদলদাকে গাড়িতে ধাক্কা মেরেছে। ও এখন মরগে আছে। তোর ছেলেমেয়েও আর নেই। এবার তোর পালা বলেই অর্চনা দেবীর গলাটা টিপে মাটিতে লুটিয়ে দিল রতনের ছায়া মূর্তি। রতন ছিল বাদলবাবুর দূর সম্পর্কের খুড়তুতো ভাই। রতনের আত্মা প্রতিশোধ নিল। আজ সে মুক্ত। বাংলোটা বাদলবাবুর খুব পছন্দ ছিল। রতন কিছুতেই বিক্রি করবে না।আর বাদলবাবুও ছাড়বে না। এই রকম অবস্থায় দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তিতে বাদলবাবুর হাতে মরতে হল রতনকে।

পরের দিন সকাল বেলায় কাজের মেয়ে এসে দেখল মেন গেট খোলা তছনছ সব জিনিস পত্র। অর্চনা দেবীর জ্ঞান আসতেই রন আর পিয়ালির খোঁজ করছে। পুলিশ এসে রন আর পিয়ালির ডেড বডি বার করল। বাদলদার বডি পোস্টমটম হল।অর্চনা দেবী এখন মেন্টাল হসপিটালে আছেন। বাংলোটার আর কেউ দাবিদার রইল না। ভুতুড়ে বাংলো হিসাবে এখন সবাই চেনে।

Loading

Leave A Comment